সাভারে স্কুলছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা, নেশাদ্রব্য খাওয়ানো ও ছাদ থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহনাজ মিশুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ মেহনাজ মিশুকে গ্রেপ্তার করে।
আজ শনিবার দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শাহানাজ গার্ডেনের এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সকালে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মেহনাজ মিশু ও তার কথিত স্বামী আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে মামলা রুজু করা হয়।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেহনাজ মিশুকে আটকের পর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অপর আসামি আতিক পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ মামলা হয়েছে।’
আসামিরা সাভারের গেন্ডা এলাকার বাসস্ট্যান্ড শাহানাজ গার্ডেনের বাসিন্দা। মিশু গ্রেপ্তার হলেও আতিক পলাতক রয়েছে। ভুক্তভোগী সাভারের একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
মামলার এজাহার সূত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করতেন মেহনাজ মিশু। পূর্ব পরিচয় ও প্রতিবেশীর সূত্র ধরে ভুক্তভোগীকে কৌশলে মেহনাজ তার বাসায় নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে ছাত্রীকে বাসায় বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার চেষ্টা করে। এসময় আতিক ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রাজি না হলে তাকে সিগারেটের ছ্যাকা ও নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। পরে বাসার ৫ম তলার বেলকুনি থেকে নীচে ফেলা দেয় মিশু ও আতিক। পরে স্থানীয়রা ভুক্তভোগীকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে একটু সুস্থ হলে হাসপাতালে গিয়ে মিশু ভুক্তভোগীকে ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দেয় এবং সে নিজে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল বলে সবাইকে জানাতে বলে। ১৫ দিন চিকিৎসাধী থাকার কিছুটা সুস্থ হলে খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে বাসায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মামা বলেন, ‘বাসার মালিকের মেয়ে মিশু মাফিয়া টাইপের। মেয়েদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করায়।’
তিনি আরও বলেন, বাবা-মা পৃথক হওয়ার পর ভাগনি তার ফুফুর সঙ্গে মিশুদের বাসায় ভাড়া থাকতো। কিন্তু ফুফু গ্রামে ও ফুফুতো বোন চাকরি সুবাদে অন্যত্র চলে যায়। তখন একাই বসবাস করতে থাকে। সেই সুযোগে তাকে নিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে চেষ্টা করে। গত ২৪ জুলাই সারা রাত দফায় দফায় মারধর করে। আমরা ভাগনি পুলিশকে জানাবে বললে, ৫ম তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ফোনও ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয়রা খোঁজ করে পরিবারের ঠিকানায় যোগাযোগ করে। তারপর আমরা জানতে পারি।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মেহনাজ মিশুর বিরুদ্ধে আগেও কিছু অভিযোগ এসেছে। আমার স্বাক্ষর নকল করে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেন বলেও জেনেছি। অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।